হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বিদায় হজের বানী (১ম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন তাজুল ইসলাম ২৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:২৫:৩৬ দুপুর

দীর্ঘ ২৩ বছরে কঠিন সাধনা আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মহানবী (সাঃ) মহান স্রষ্টার ইচ্ছার স্বরূপে আরব জাহানকে গড়ে তুলেছিলেন। দশম হিজরি জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখে আয়োজিত হয় বিশ্বমানবতায় এক মহাসমাবেশ। মহানবী (সাঃ)ইসলামের অন্যতম রুকুন হজ্ব আদায়ের জন্য বিপুলসংখ্যক ভক্তকে সঙ্গে নিয়ে অনবরত আট দিন পথ চলে মক্কাধামে উপনীত হন। হজ্বের আনুষ্ঠানিকতা সম্পুর্ন করে মহানবী (সাঃ)আরাফাত ময়দানে, মহাসমাবেশে দাঁড়িয়ে মহাগুরুত্বপুর্ণ এক ভাষণ দান করেন। মহানবী (সাঃ) এর ভাষণ ছিল মূলত আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ের চূড়ান্ত ঘোষণা।

আর তাই তো সেদিন নাজিল হয়েছিল “আজ আমি তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহকারীকে সুসম্পন্ন করলাম, আর ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম(সুরা মায়েদা, আয়াত-৩)।

আরাফাত ময়দানে বিদায় হজ্বের ভাষণে মহানবী (সাঃ) এর কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল ইসলামের মর্মবানী। মহানবী (সাঃ) বিশাল জনসমুদ্রে মাঝে দাঁড়িয়ে মহান প্রভুর গুনকীর্তন করেন, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সমবেত জনমণ্ডলীকে সম্বোধন করে বললেন, "হে লোকেরা। আমার কথাগুলো মনোযোগ সহ শ্রবণ করো। আমার মনে হয়, এরপর আমার পক্ষে হজের মহান আনুষ্ঠানিকতায় যোগদান করা সম্ভব হবে না। শুনে রেখো, অন্ধকার যুগের সব কুসংস্কার, সব অন্ধবিশ্বাস এবং সব ধরনের অনাচার আজ আমার পায়ের নিচে দাফন করা হল। বর্বর যুগের শোণিত-প্রতিশোধ প্রথা আজ থেকে রহিত করা হলো, মুখতা যুগের সব সুদ আজ থেকে বাতিল করা হলো। আমি সর্বপ্রথম আমার স্বগোত্রের প্রাপ্য সুদ ও সব ধরনের রক্তের দাবি রহিত ঘোষণা করছি। মনে রেখো, একজনের অপরাধে অন্যকে দণ্ড দেওয়া যাবে না। পিতার অপরাধে পুত্রকে এবং পুত্রের অপরাধে পিতাকে অভিযুক্ত করা চলবে না। যদি কোন নাক কাটা হাবশি ক্রিতদাশকেও তোমাদের আমির নিযুক্ত করা হয় এবং সে আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালনা করে, তাহলে তোমরা

সর্বতোভাবে তাঁর অনুগত করবে। তাঁর আদেশ মান্য করবে। সাবধান! ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। এতদ্বিষয়ে সীমা লঙ্ঘনে কারণে তোমাদের পুর্ববতী বহু জাতি ধ্বংশ হয়ে গেছে। মনে রেখো! তোমাদের সবাইকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে হবে। তাঁর কাছে এসব কথার জবাবদিহি করতে হবে। সাবধান, তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যেওনা, খোদাদ্রোহী হয়ে পরস্পরে রক্তপাতে লিপ্ত হয়ো না।

স্মরণ রেখো, আজকের এই দিন এই মাস যেমন মহিমান্বিত, মক্কায় হেরেম পবিত্র, প্রতিটি মুসলমানের ধনসম্পদ, সবার ইজ্জত-সম্ভ্রম এবং প্রতিটি মুসলমানের রক্তবিন্দু তোমাদের কাছে সে রকমই পবিত্র। আগের বিষয়গুলোর পবিত্রতা নষ্ট করা যেমন তোমরা পরিত্যাজ্য ও হারাম বলে জানো। তেমনি কোন মুসলমানের সম্পদ সম্ভ্রম ও জীবনের ক্ষতি সাধন, তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, মহাপাপ। অনারবদের উপর আরবদের প্রধান্যের কোন কারন নেই। মানুষ সবাই আদমের সন্তান আর আদম মাটি থেকে সৃষ্ট। জেনে রেখো নিশ্চয়ই এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। আর জগতের সব মুসলমান মিলে এক অবিচ্ছেদ্য ভ্রাতৃসংঘ। হে লোকেরা, জেনে রেখো, আমার পরে আর কোন নবীর আগমন হবে না।তোমাদের পরে আর কোন উম্মাহ নেই। আমি যা বলছি মনোযোগ দিয়ে শোনো।

চলবে...।।

বিষয়: বিবিধ

১১৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File